রাত ১২ টায় রাজধানীর কল্যাণপুর থেকে রওনা হয়ে গাবতলি পৌঁছাতে বাজে আড়াইটা। এরপর রাস্তা একটু ফাঁকা থাকায় রাত চারটা নাগাদ টাঙ্গাইলের কটিয়া মোড়।
সেখানেই একটানা চারঘণ্টা। এ চারঘণ্টায় গাড়ির চাকা ঘোরেনি এক ইঞ্চিও।
শনিবার (৯ জুলাই) সকাল আটটায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত হাজার হাজার গণপরিবহনকে একইভাবে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার পাকুল্য বাজার পর্যন্ত এ যানজটের বিস্তৃতি বলে জানা গেছে।
এদিন বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে রোদের তীব্রতা, বেড়েছে লাখ লাখ সাধারণ মানুষের ভোগান্তি। বিশেষ করে নারী, শিশু এবং খোলা ট্রাকে যারা ভ্রমণ করেছেন তাদের ভুগতে হচ্ছে সব চেয়ে বেশি।
সকালে দেখা যায়, অধিকাংশ বাস এবং ট্রাকের মানুষগুলো গাড়ি থেকে নেমে রাস্তায় বসে আছেন। অনেককে এ সময় দল বেঁধে লুডু খেলতেও দেখা গেছে। এছাড়া বিপরীত সড়ক ফাঁকা হওয়ায় অনেকে দাঁড়িয়ে সেলফিও তুলেছেন। খোলা ট্রাকে ছাতা মাথার ওপর রেখে ঘুমিয়েছেন অনেকে।
এ সড়কের কুষ্টিয়াগামী যাত্রী মো. মাসুম ভেল্কি নিউজকে বলেন, ৮ ঘণ্টা অপেক্ষার পর বিকেল ৪টার গাড়ি ছাড়ে রাত ১২টায়। এরপর আবার জ্যামে আটকে আছি। রাত ৪টা থেকে এক ইঞ্চিও নড়েনি গাড়ির চাকা। অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। প্রথমে ভেবেছিলাম সকাল ৮/৯ টার মধ্যে বাড়ি পৌঁছাতে পারবো। কিন্তু অবস্থা যা দেখছি, তাতে আগামীকালও পৌঁছাবো কি না সন্দেহ!
পিকাপ ভ্যানে থাকা বগুড়ার যাত্রী আতিকুন নাহার ভেল্কি নিউজকে বলেন, কোনো বাস না পেয়ে শেষে বাধ্য হয়ে পিকাপ ভ্যানে যাত্রা করেছি। আর এখন রাস্তার এ অবস্থা! ছোট ছোট বাচ্চা আছে, আশেপাশে খাবার নেই। অনেকে আবার অসুস্থ হওয়ার উপক্রম।
এদিকে ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে শুক্রবার (৮ জুলাই) ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে ৪০ কিলোমিটার এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। শুক্রবার ভোর রাত থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব দিক হতে বাসাইল উপজেলার গুল্লাহ পর্যন্ত এ যানজটের সৃষ্টি হয়। যানজটের কারণে ঘরমুখো মানুষ, বিশেষ করে নারী ও শিশুরা পড়েছেন বিপাকে। গন্তব্যে যেতে কয়েক গুণ বেশি সময় লাগছে।
সড়কে টহলরত বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মীরা জানিয়েছেন, সড়কে অতিরিক্ত পরিবহনের চাপেই এ যানজট ও দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, যানজট নিরসনে মহাসড়কে সাত শতাধিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপরে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনা কবলিত যানবাহনগুলো সরাতে সময় লাগে। এ কারণে এক ঘণ্টা ৪০ মিনিট টোল আদায় বন্ধ রাখে বঙ্গবন্ধু সেতু কর্তৃপক্ষ। আর এ জন্য মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। যার প্রভাব এখনো আছে। তবে মানুষের বাড়ি ফেরা নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, মহাসড়কে উত্তরবঙ্গগামী যানবাহনের চাপ রয়েছে। যানজট নিরসনে সার্বক্ষণিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে।