দৈনিক পারাপার ৩৫০০-৪৫০০ গাড়ি!
ঈদে যানবাহনের চাপ সামলাতে চলবে ২৩ ফেরি!
ঈদে যানবাহনের চাপ !
দৌলতদিয়ায় তিনটি ঘাট বন্ধ, গাড়ি ওঠা নামায় দেরি!
পদ্মায় নাব্য সংকটে চলাচল বিঘ্নিত হওয়ার শঙ্কা!
যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ ও ফেরি সংকটে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটের দুই ঘাটে লেগে থাকছে গাড়ির দীর্ঘ সারি। ফেরি পারাপারের জন্য যাত্রীবাহী বাসকে অপেক্ষা করতে হচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। আর পণ্যবাহী ট্রাকের চালক সহকারীদের দিন রাত কাটছে ঘাট অভিমুখের রাস্তায়। গেলো একমাস ধরে রোজ এমন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এ রুটের যাত্রী ও চালকদের। এর মধ্যে নদীতে দেখা দিয়েছে নাব্য সংকট। রয়েছে ঘাটের নানা সমস্যাও। সংকট নিরসন না হলে আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতরে ঢাকা থেকে দক্ষিণবঙ্গের ২১-২২ জেলার ঘরমুখো যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হতে পারে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর সঙ্গে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া। এ নৌরুট দিয়ে প্রতিদিন ছোট বড় তিন হাজার ৫০০ থেকে চার হাজার ৫০০ যানবাহন ও লাখো যাত্রী পদ্মা নদী পার হয়। ঈদকে ঘিরে এ রুটে যানবাহন ও যাত্রীর সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। ফলে পাটুরিয়া ঘাট অভিমুখের রাস্তা এবং ফেরি পার হয়ে দৌলতদিয়া ঘাট থেকে বের হওয়ার মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। অনেক সময় রাস্তাতেই পড়তে হয় ঈদের নামাজ। ঈদ উৎসব শেষে কর্মজীবীদের রাজধানীতে ফেরার পথেও একই রকম ভোগান্তি পোহাতে হয় যাত্রীদের।
ঘাট সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পদ্মায় তীব্র নাব্য সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে ফেরি চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। যানবাহনের চাপ বাড়লেও ফেরি বাড়ছে না। বরং মাঝেমধ্যে অকেজো হয়ে পড়ে থাকে অনেক ফেরি। ঈদে বিআইডব্লিউটিসি নতুন পাঁচটি ফেরি বাড়ানোর ঘোষণা দিলেও চাপ সামলাতে তা পর্যাপ্ত নয়। এছাড়া সংস্কার না হওয়ায় ঘাটে যানবাহন লোড-আনলোডে দীর্ঘ সময় লাগছে। ফলে ভোগান্তি ক্রমেই বাড়ছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন করপোরেশন ‘বিআইডব্লিউটিসি’ সূত্রে জানা গেছে, দৌলতদিয়া পাটুরিয়া নৌরুটে বর্তমানে ছোট-বড় ১৯টি ফেরি রয়েছে, যার মধ্যে চলাচল করছে ১৮টি। ঈদে যানবাহনের চাপ বাড়বে। এ চাপ সামলাতে আরও তিনটি রো রো ফেরি এবং একটি ইউটিলিটি ফেরি এ বহরে যুক্ত হচ্ছে। সবমিলিয়ে ঈদযাত্রায় ২৩টি ফেরি যানবাহন পারাপার করবে। ঈদের ১০ দিন আগে থেকে এসব ফেরি চলাচল শুরু করবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দৌলতদিয়া প্রান্তের সাতটি ফেরিঘাটের মধ্যে বর্তমানে সচল রয়েছে চারটি। নদীভাঙনের ফলে ১ ও ২ নম্বর ঘাটটি কয়েকবছর ধরে বন্ধ। ৬ নম্বর ঘাটটি সম্প্রতি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বাকি চারটি ঘাটের মধ্যে ৩ ও ৪ নম্বর ঘাট কোনোরকমে চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আর ৫ ও ৭ নম্বর ঘাট পুরোপুরি সচল রয়েছে। এছাড়া নদীর পানি কমে চর জেগেছে।
ফলে সরাসরি নৌপথটি ব্যবহার না করে অনেক ঘুরে চলাচল করছে ফেরিগুলো। ঘাটের সমস্যা ও নাব্য সংকটে একটি ফেরিতে যানবাহন তুলতে এবং গন্তব্যে পৌঁছাতে আগের চেয়ে বেশি সময় লাগছে।
বিআইডব্লিউটিসির উপ-মহাব্যবস্থাপক ‘বাণিজ্য’ শাহ মো. খালেদ নেওয়াজ জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমানে এ নৌরুটে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। বিশেষ করে দৌলতদিয়া প্রান্তে পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে দীর্ঘসময় অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। সমস্যা নিরসনে আমরা চেষ্টা করছি।
তিনি বলেন, আসন্ন ঈদে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বাড়বে। এ বিষয়টি বিবেচনায় করে পাঁচটি নতুন ফেরি যুক্ত করা হয়েছে। আগের ১৮টি এবং নতুন পাঁচটিসহ ২৩টি ফেরি চলাচল করবে।
এর মধ্যে রো রো ফেরি ১৩টি। ঈদের ১০ দিন আগে থেকে এগুলো চালু করা হবে। বড় দুর্ঘটনা না হলে এবং ফেরিগুলো স্বাভাবিক চলাচল করলে ঈদের চাপ সামাল দেওয়া সম্ভব হবে বলে আশা করছি।
রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার ‘এসপি’ এম এম শাকিলুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, ঘাটের মূল সমস্যা হচ্ছে ফেরি সংকট। ফেরি দ্রুত চলাচল করলে এবং যানবাহন দ্রুত লোড আনলোড হলে যাত্রীরা স্বস্তিতে যাতায়াত করতে পারে।
তিনি বলেন, ঘাট এলাকায় সবাই অস্থির হয়ে ওঠেন। অনেকে নিয়ম মানেন না। উল্টোপথ দিয়ে দ্রুত বের হওয়ার চেষ্টা। তখন রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। এটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।
সবাইকে নিয়ম মেনে ধৈর্য সহকারে ঘাট পার হওয়ার অনুরোধ করছি। তাহলেই ঘাটের শৃঙ্খলা বজায় থাকবে। চলাচল সহজ হবে। দ্রুত ঘরে ফিরতে পারবেন।
ঘাটকেন্দ্রিক ছিনতাই চাঁদাবাজি ঠেকাতে পুলিশ তৎপর থাকবে জানিয়ে এসপি বলেন, ‘ঈদের সময়ে ঘাটে অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি, দলালের তৎপরতা এবং ছিনতাই ও চাঁদাবাজি বেড়ে যায়। এসব অপরাধ ঠেকাতে ঘাটে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আশা করছি, সবাই পুলিশকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন।