স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার মোকাবেলা করেছে সিলেটের মানুষ। গত এক শতাব্দীতেও এমন বন্যার কথা কেউ শোনেনি।
১৫ জুন থেকে ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে ক্রমশ, বন্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এতে গত ১০ দিন ধরে বন্যার কবলে সিলেট। এ বন্যা পুরো জেলা তছনছ করে দিয়ে এখন ধীরগতিতে নামছে পানি। তবে এখনও জলমগ্ন বেশিরভাগ এলাকা।
গত ২৪ ঘণ্টায় পানি নামার গতি ছিলো খুবই কম। ফলে জেলার বেশিরভাগ এলাকা এখনও প্লাবিত। আর পানিবন্দি থাকা বানভাসিদের দুর্ভোগের শেষ নেই।
সিলেট জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, শনিবার (২৫ জুন) পর্যন্ত সিলেট সিটি করপোরেশনসহ জেলার ১৩টি উপজেলায় ৯৯টি ইউনিয়ন ও ৫টি পৌরসভায় ২ হাজার ৫৬০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
এতে মোট ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৩২০ পরিবারের ২০ লাখ ২৫ হাজার ২৪৫ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের স্বাস্থ্য সেবায় নামানো হয়েছে ১৪০টি মেডিক্যাল টিম।
এছাড়া বন্যায় ২২ হাজার ১৫০টি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এছাড়াও ২৮ হাজার ৯৪৫ হেক্টর ফসল নষ্ট হয়েছে, বলেও নিশ্চিত করা হয়।
এদিকে, সিলেট নগরী ও আশপাশ এলাকায় গত ৪ দিনে বন্যার পানি অনেকটাই কমেছে। পানি কমতে শুরু করায় অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছে।
তথ্যমতে, সিলেট সিটি করপোরেশনে ৬১৪ টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২ লাখ ৫২ হাজার ৮৭৮ জন আশ্রয় নেন। শনিবার পর্যন্ত ৫৯ হাজার ৬৯৯ জন আশ্রিত রয়েছেন। সে হিসেবে, প্রায় ১ লাখ ৯৩ হাজার ১৭৯ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে চলে গেছে। তবে বর্তমানে রাস্তাঘাটে জমে থাকা বন্যার ময়লা পানি থেকে দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করেছে।
শনিবার (২৫ জুন) দুপুরে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রধান সড়কগুলোর যেসব স্থানে পানি জমে ছিল, সেগুলো প্রায় নেমে গেছে। তবে কিছু সড়কে এখনো পানি রয়েছে। এরমধ্যে সিলেট নগরীর শাহজালাল উপশহর এবং তালতলা সড়কসহ বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার সড়কগুলোতেও পানি রয়ে গেছে। তবে সব কটি সড়কেই যানবাহন চলাচল করছে।
অপরদিকে, নগরীর যতরপুর, মিরাবাজার, শাহজালাল উপশহর, সোবহানীঘাট, মির্জাজাঙ্গাল, তালতলা, জামতলা, শেখঘাট, ঘাসিটুলা, কুয়ারপাড়, লালাদিঘীর পাড় এলাকার পাড়া-মহল্লার পানি ময়লা ও কালো রং ধারণ করেছে। এসব স্থানে জমে থাকা পানি থেকে উৎকট দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
জেলার বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় পানি নামার গতি খুব মন্থর। অনেক স্থানে পানি নামেনি। বন্যার স্থায়ীত্বে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন বানভাসি মানুষ।
সিলেটের দক্ষিণ সুরমা বাসিন্দা আব্দুল কুদ্দুস বলেন, পানি যেন এক জায়গায় আটকে আছে। বাড়ছেও না কমছেও না। এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ঘরের ভেতর পানি। উদ্বাস্তু হয়ে আর কতদিন থাকা যায়।
বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র থাকা একই এলাকার মাহবুব আলম বলেন, পানি সহজে কমছে না, খাবার মিলছে না। জীবন অসহায় হয়ে পড়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১৫ জুন থেকে সিলেটে বন্যা দেখা দেয়। দুদিন পর থেকে তা ভয়ঙ্কর রূপ নেয়। প্লাবিত হয় জেলার ৮০ শতাংশ এলাকা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় পরিচালক ডা. হিমাংশু রাল রায় বলেন, ভয়াবহ বন্যায় প্রাকৃতিক দুযোর্গে ১৭ মে থেকে শনিবার (২৫ জুন) পর্যন্ত সিলেট বিভাগে ৫১ জনের প্রাণহানি হয়েছে।
পাঁচ দিন ধরে ধীরে ধীরে পানি কমতে শুরু করে, তবে সুরমা নদীর পানি এখনও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
অন্যদিকে, কুশিয়ারা অববাহিকায় পানি বাড়ছে। কুশিয়ারার পানি বাড়ায় শনিবার পর্যন্ত জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, ওসমানীনগর, বিশ্বনাথ, দক্ষিণ সুরমায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়।