দেশে করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে আড়াই মাস আগে রাজধানীর মহাখালীতে ‘ডিএনসিসি ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতাল’ চালু করেছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর। এক হাজার শয্যার এ হাসপাতালে পাঁচ শতাধিক আইসিইউ (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) ও এইচডিইউ ((হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিট) সমমান শয্যা রয়েছে। বাকি ৫০০ শয্যা সিলিন্ডার বেইজড। এখন দেশে করোনার সংক্রমণ এবং মৃত্যু বাড়ছে দ্রুত। সোমবার (৫ জুলাই) নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন নয় হাজার ৯৬৪ জন, মারা গেছেন ১৬৪ জন।
এমন পরিস্থিতিতে ‘ডিএনসিসি ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতাল’র চিকিৎসা সেবা এবং ব্যবস্থাপনা নিয়ে ভেল্কি নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করছি গত কয়েক দিন ধরে সারাদেশে করোনা সংক্রমণের হার ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এর একটা প্রভাব আমাদের হাসপাতালেও পড়েছে। আমাদের এখানেও রোগী ভর্তি এবং মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। গতকাল রোববার (৪ জুলাই) ৬০ জন রোগী এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। মারা গেছেন ১৩ জন। অথচ কিছুদিন আগেও দিনে মৃত্যুর হার প্রায় শূন্যের কোঠায় ছিল।’
গতকাল রোববার যে ৬০ জন করোনা রোগী হাসপাতালটিতে ভর্তি হয়েছিলেন; তাদের ৩০ জনকে আইসিইউতে ও বাকিদের এইচডিইউতে ভর্তি করা হয়েছে জানিয়ে এ কে এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘হাসপাতালটিতে যদি দিনে ৬০ জন রোগী ভর্তি হন, সংখ্যাটা অনেক বেশি। কারণ যারা ভর্তি হন তাদের প্রায় সবার অবস্থাই সিরিয়াস থাকে। কাউকে সাধারণ ওয়ার্ডে রাখার সুযোগ হয় না। তাদের প্রত্যেকের অবস্থাই ক্রিটিক্যাল থাকে। চিকিৎসার শেষ ধাপে এসে হাসপাতালে ভর্তি হন। ফলে চিকিৎসকদের তেমন কিছু করার থাকে না। এছাড়া এখন এই হাসপাতালের ৮০ ভাগ রোগী ঢাকার বাইরের। যারা ঢাকার বাইরে থেকে আসছেন তাদের মধ্যেই মৃত্যুর হার বেশি। তারা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার এক-দুই দিন পরই মারা যাচ্ছেন।’
১০-১২ দিন আগেও ডিএনসিসি ডেডিকেটড করোনা হাসপাতাল দিনে মাত্র ৬৫ জন করোনা রোগী ভর্তি ছিলেন জানিয়ে পরিচালক বলেন, ‘১০-১২ দিন আগে আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন ৩০ জন। বাকিরা ছিলেন এইচডিইউতে। কিন্তু এখন হাসপাতালটিতে প্রায় ৪০০ রোগী ভর্তি আছেন। তাদের মধ্যে আইসিইউতে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১২৭ জন। বাকিরা এইচডিইউতে আছেন। এভাবে চলতে থাকলে আগামী তিন-চার দিনের মধ্যেই আইসিইউ ভরে যাবে। এইচডিইউও ফাঁকা থাকবে না। তখন আইসিইউ এবং এইচডিইউ সংকট সৃষ্টি হবে।’
তিনি বলেন, ‘যারা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন, তারা যে খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠছেন তা নয়। তাদের আট থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত হাসপাতালে থাকতে হচ্ছে। এমনও রোগী আছেন, তারা ২৮ দিন পর্যন্ত হাসপাতালে ছিলেন। তারা সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তো তাদের বিদায় করতে পারি না। সাধারণ ওয়ার্ডে (সিলিন্ডারসহ ৫০০ শয্যা) তেমন রোগী নেই। এখন সেখানে বিদেশফেরত ২০ জনকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বাকি শয্যা ফাঁকা রয়েছে।’
এখন সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে, তাদের সেবা দিতে হাসপাতালটিতে আরও জনবল লাগবে জানিয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আগে পর্যাপ্ত পরিমাণ চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্য জনবল দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। কিন্তু এখন যে হারে রোগী বাড়ছে, আরও কিছু জনবল লাগবে। সেগুলোর বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা আরও জনবল দিচ্ছেন। আশা করি সামনে জনবলসহ আনুষঙ্গিক সব সহযোগিতা পাব। করোনা এভাবে বাড়তে থাকলে কোনো সিস্টেমই কাজে আসবে না। তখন অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে যাবে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে যা ঘটেছে। এজন্য আমাদের সবার সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই। নিজের পরিবার ও প্রতিবেশীর জন্য সচেতন হতে হবে। অন্যথায় সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবো।’