এছাড়াও তার মাথার অর্ধেক নেই, এমনকি মগজও রয়েছে পৃথকভাবে একটি থলেতে।
শুক্রবার (২৭ আগস্ট) রাত ১০টার দিকে গোমস্তাপুর মহানন্দা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এমন শিশুর জন্ম হয়। মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন ঘটনা খুবই বিরল।
গোমস্তাপুর উপজেলার বালুগ্রাম দক্ষিণটোলা গ্রামের ভ্যানচালক নাসির হোসেনের স্ত্রী জিন্নাতুন খাতুন শিশুটির জন্ম দিয়েছেন।
শনিবার (২৮ আগস্ট) সকালে এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত শিশুটি সুস্থ ছিল। ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ, নার্স, আয়া ও শিশুটির স্বজনরা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা যায়, প্রসব বেদনা উঠলে শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ক্লিনিকে ভর্তি করা হয় জিন্নাতুন খাতুনকে। বাচ্চা প্রসবের নির্ধারিত তারিখের দুইদিন পেরিয়ে যাওয়ায় সিজারিয়ান অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসক। পরে ডাক্তার মো. হাসেম আলীর নেতৃত্বে সিজার করা হয়।
সিজারে অংশ নেওয়া নার্স মোসা. ফাতেমা খাতুন বলেন, অপারেশন থিয়েটারে সিজার করার সময়ই দেখতে পান, বাচ্চাটির মাথা নেই। যা রয়েছে তা মাথার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। এমনকি মাথার ভেতরে থাকা মগজ বাইরে আলাদা একটি থলেতে আছে। অবাক করা বিষয় শিশুটির মেয়ে এবং ছেলে দুই ধরনের প্রজনন অঙ্গ রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, অপারেশন থিয়েটারে এমন শিশু দেখে সবাই অবাক হয়েছিলাম। পরে তাদের স্বজনদের জানানো হয়। শিশুর মাকেও জানানো হয়েছে। জন্মের কিছুক্ষণ পর তার মা তাকে দেখেছে। এরপর জানাজানি হলে উৎসুক জনতা শিশুটি দেখতে ভিড় জমায়। দীর্ঘ সিজারের অভিজ্ঞতায় এমন শিশু কখনও দেখিনি।
শিশুটি জন্মের পর ক্লিনিকের আয়া মোসা. ইদন বেগম তার নাভি কেটেছে। তিনি জানান, জন্মের পর বাচ্চাটিকে আমার হাতে তুলে দেওয়া হয়। বাইরে এনে নাভি কেটেছি। তার ওজনসহ বাকি সবকিছু স্বাভাবিক আছে। মুখে হাসিও দেখেছি। কিন্তু মাথা অর্ধেক নেই এবং পুরুষ ও নারীর উভয় লিঙ্গই রয়েছে। নাভি কাটার পর শিশুটি তাদের স্বজনদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
প্রসূতি জিন্নাতুন খাতুনের বোনের স্বামী আলামিন বলেন, আমার শ্যালিকার এটি দ্বিতীয় সন্তান। এর আগে একটি ছেলে রয়েছে তার। আল্ট্রাসনোগ্রামেই শিশুটির অদ্ভূত আকৃতির বিষয়ে আমরা জানতে পেরেছিলাম। শিশুটির মাথা নেই বললেই চলে। কপাল থেকেই শেষ হয়েছে। মগজ আলাদাভাবে একটি থলেতে আছে।
মহানন্দা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শ্রী নন্দন কুমার কর্মকার জানান, দীর্ঘ ১২ বছর ধরে আমাদের ক্লিনিকে বহু সিজার হয়েছে। এমনকি আজকেও (শুক্রবার) ক্লিনিকে চারটি বাচ্চা প্রসব করেছে। তার মধ্যে তিনটিই সিজার হয়েছে। কিন্তু নাসির হোসেনের ও জিন্নাতুন খাতুন দম্পতির শিশুটি অদ্ভূত আকৃতি ও অঙ্গ নিয়ে জন্ম নিয়েছে। বর্তমানে মা ও শিশু দুইজনেই সুস্থ রয়েছে।
বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন-বিএমএ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. গোলাম রাব্বানী বলেন, এমন ঘটনা খুবই বিরল। উভয় লিঙ্গ নিয়ে জন্ম নেওয়ার ঘটনা চিকিৎসা বিজ্ঞানে একেবারেই অদ্ভূত! তবে মাথার খুলির পরিপক্বতা না পেলে মগজ আলাদা হয়ে থাকতে পারে।